আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বদেশ গড়তে প্রকৃত দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান দরকার বলে মনে করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য।গতকাল বৃহষ্পতিবার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। গতকাল ১৭ মার্চ বিকেল ৪টায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভা প্রেসিডিয়াম সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত সংগঠনটির অফিস হলরুমে এই সভাটি সম্পন্ন হয়। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক এ্যাড. পারভেজ হাসেম।
এছাড়া সাংগঠনিক ও বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে আজাদ। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রসেডিয়াম সদস্য ডা. সারওয়ার আলী (ভার্চুয়াল), এডভোকেট এসএমএ সবুর, আব্দুল মুনায়েম নেহেরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম মিলন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নন্দলাল পার্শি, খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রঞ্জিত কুমার সাহা, মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, এডভোকেট আওলাদ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা মহানগর সদস্য-সচিব জোবায়ের আলম প্রমুখ।
সংগঠনের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. সারওয়ার আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে আমরা শামিল হয়েছিলাম সেই ধারা আজকে সমাজে অনুপস্থিত। সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য, শোষনমুক্তির সংগ্রামকে এখন আরো জোরদার করা দরকার। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এই কাজটি এগিয়ে নিতে আরো তৎপর হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, স্থিতিশীল গণতন্ত্র, শোষণ, বৈষম্য ও অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য অর্ধশতাব্দী পূর্বে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের কবল থেকে ৩০ লক্ষ শহিদানের আত্মদানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন জাতিকে দেখিয়েছেন তা এখন অস্পষ্ট। এখানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়েই জাতির স্বপ্নকে কবর দেওয়া হয়েছে। ’৭৫ এর পর থেকেই যারা ক্ষমতায় গেছেন তারা সবাই প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধকে বিসর্জন দিচ্ছেন। এখানে মাফিয়া লুটেরা, সাম্প্রদায়িকতাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী ও সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট শক্তিসমূহ রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত নিয়ামক শক্তিহিসেবে মদদপুষ্ট হয়ে দেশ বিরোধী শক্তিকে ইন্ধন যোগাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন নির্বাসিত ও বিপদগ্রস্ত বলে মনে করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বদেশ গড়তে হলে প্রকৃত দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে বলেও মনে করেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে মৃত্যুবরণ করা সংগঠনের উপদেষ্টা ড. আনিসুজ্জামান, সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুকুমার দেব রায়, কেন্দ্রীয় কামটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান কাবুল, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হাসানসহ দেশের অন্যান্য গুনিজনদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এছাড়া উক্ত সভা বৈশ্বিক মহামারী করোনায় জটিল পরিস্থিতিতে দেশে-বিদেশে জনজীবনের বিপর্যয়, দ্রবমূল্য বৃদ্ধি ও কর্মহীনতা, বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেমে আসা হতাশা, অবক্ষয়, বিপর্যয়, নারী শিশু নিপীড়ন, সংখ্যালঘু, আদিবাসী নিপীড়ন, বৈষম্য দিন দিন চরম আকার ধারন করছে বলে উল্লেখ করা হয়।এছাড়া রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের চলামান যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি নানা শঙ্কা তৈরী করে চলেছে বলে মনে করেন নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে দেশে রাষ্ট্রীয় বিধি ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে মাফিয়া চক্রের কারসাজিতে প্রতিনিয়ত খাদ্যপণ্যের উর্ধ্বমুখী বাজার বেড়ে চলায় উদ্বেগ জানায় নেতৃবৃন্দ।
উপরোক্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানাবিধ রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় উদ্যোগে নিম্নোক্ত দাবীগুলো সভায় তুলে ধরা হয়-
১. যুদ্ধ নয়-পারমানবিক অস্ত্রমুক্ত মানবিক বিশ্ব চাই;
২. খাদ্যপণ্যের দামসহ জ্বালানী তেল, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না;
৩. গরীব, মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য পূর্ণরেশনিং ব্যবস্থা চালু কর;
৪. মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলা;