চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমতলের আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।আজ ৩১ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সমতলের আদিবাসীদের সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভূতি ভূষণ মাহাতো, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নয়ন পাহান প্রমুখ এবং পার্বত্য চট্টগাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেন চাকমা, অর্থ সম্পাদক নরেশ চাকমাসহ পিসিপি’র বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এ সময় পিসিপির পক্ষ থেকে থেকে সমতলের আদিবাসী নেতৃবৃন্দকে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অগ্রদূত মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্মারক উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।
মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইকে যৌথভাবে এগিয়ে নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের যে ষড়যন্ত্র শাসকগোষ্ঠী চালিয়ে যাচ্ছে সে নীলনকশা যাতে বাস্তবায়িত হতে না পারে সেজন্য জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামকে আরো বেগবান করার উপর জোর দেন । মতবিনিময় সভায় সমতলের আদিবাসী নেতৃবৃন্দ সমতলের আদিবাসীদের উপর শাসকগোষ্ঠীর দমন পীড়নের ইতিহাস তুলে ধরে ২০১৬ সালের নভেম্বরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল আদিবাসীদের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় যথাযথ বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মধুপুরে বন বিভাগ কর্তৃক আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে সেখানকার আদিবাসীদের আন্দোলনে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের যে সমর্থন তা আরো জোরালো করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠনের দাবী নিয়ে যে আন্দোলন তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
মতবিনিময় সভায় পিসিপির নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘পাহাড় এবং সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের যে লড়াই তা একসূত্রে গাঁথা। তাই এই আন্দোলনে উভয় অঞ্চলের আদিবাসীদের একসাথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে এবং সমতলের আদিবাসীদের আন্দোলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সমর্থন ইতোপূর্বেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন। পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের অবিসংবাদিত নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা নেতৃত্বে আদিবাসীদেরকে এক পতাকাতলে আসার কোন বিকল্প নেই এবং এই আন্দোলনকে আরো জোরালো করতে হবে।”
পিসিপির নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘‘পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের প্রধান সমস্যা হলো ভূমি সমস্যা। ভূমি নিয়ে কৃত্রিম যে সমস্যা সেটি রাষ্ট্র কর্তৃক সরাসরি সৃষ্টি করা। গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লী, টাঙ্গাইলের মধূপুর ও বান্দরবানের চিম্বুকে ম্রো আদিবাসীদের ভূমি বেদখলের যে পাঁয়তারা তাতে সরকারি বিভাগ ও নিরপত্তা বাহিনী সরাসরি জড়িত। আদিবাসীদের জাতিগতভাবে নির্মূূলীকরণে রাষ্ট্রীয় এ পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে।”
পিসিপির নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ছাত্র সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে পিসিপি ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদকে অগ্রগণী ভূমিকা পৃর দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ছাত্র সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে পিসিপি ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদকে অগ্রগণী ভূমিকা নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় থাকতে পারে।”
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য উভয় সংগঠন একত্রে কাজ করবে বলে ঘোষণা দেন।