করোনাকালে আদিবাসীদের খুব সামান্য সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছেন। আদিবাসীদের চিরায়ত লোকজ্ঞান করোনায় প্রতিরোধ গড়তে ভূমিকা রেখেছে। কলেরা, বসন্ত, কালাজ্বরের মতো মহামারী মোকাবেলায় আদিবাসীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলার চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায় ।
ইউএনডিপি’র ডাইভারসিটি ফর পিস এবং ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভলপমেন্টের (আইইডি) যৌথ আয়োজনে ‘আদিবাসীদের চিরায়ত লোকজ্ঞানে করোনা সংকট মোকাবেলা ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠন’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।গত মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাতে অনলাইনে উক্ত ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক মুন্নি সাহার সঞ্চালনায় এতে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রাণ-প্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ।তিনি তাঁর প্রারম্ভিব বক্তব্যে করোনা মহামারীর সময়ে আদিবাসীরা কীভাবে তাদের লোকায়ত জ্ঞান এবং মহামারী মোকাবেলায় পূর্বতন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন সে বিষয়ে তাঁর স্বকীয় গবেষণায় পাওয়া বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন আদিবাসীদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে কথা বলে তিনি তাঁর এই গবেষণা কাজটি করেছেন নিবিড়ভাবে। এই অনুষন্ধানে বিভিন্ন আদিবাসী জনগণ এই চলমান করোনা মহামারী মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ গ্রহন করেছিল তার সবিস্তার উল্লেখ করেন তাঁর বক্তব্যে। বিভিন্ন আদিবাসীরা স্ব স্ব নিয়মে লকডাউন পালনের অভিজ্ঞতার কথাও তিনি তুলে ধরেন। মহামারী মোকাবেলায় আদিবাসীদের থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
আলোচনায় রাজা দেবাশীষ রায় ছাড়াও আরও অংশ নেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, শিশু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা: গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, এফ মাইনর ব্যান্ডের ভোকাল নাদিয়া রিচিল ।
রাজা দেবাশীষ রায় আরো বলেন, মহামারি থেকে বাঁচতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহের এই লোকজ্ঞান ও লোকবিজ্ঞান আমরা গ্রহণ ও চর্চা করতে পারি। এর মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের কাছে থেকে শিখতে পারি। একইসঙ্গে আমাদের বৈচিত্রময় সমাজের সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে ধারণ পারস্পারিক সহায়তার মধ্য দিয়ে। এছাড়া চাকমা আদিবাসীদের চিকিৎসা বিজ্ঞান ‘তাল্লিকশাস্ত্র’ নিয়েও আলোচনা করেন চাকমা সার্কেল চীফ।
রাজা দেবাশীয় তাঁর বক্তব্যে অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে আদিবাসীরা নিজেদেরকে বিকশিত করতে পারেনা। পার্বত্য এলাকায় দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং অনেক ক্ষেত্রে কথা বলার জন্য ন্যূনতম নেটওয়ার্কের সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। যার ফলে তাদের বিষয়গুলো জাতীয় গণমাধ্যমে সেভাবে আসে না।
আদিবাসী চিকিৎসক ডা: গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, লকডাউন-সংগনিরোধ-সাময়িক বিচ্ছিন্নতা-বিশেষত খাদ্যাভাস এবং লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা সম্পর্কিত মহামারি সামালের বৈচিত্রপূর্ণ আদিবাসীদের স্বাস্থ্যবিধিসমূহ সুপ্রাচীন এবং এসব বিধি জাতিসমূহের ভেতর প্রচলিত আদি ধর্ম দর্শনের সাথে অধিকতর সম্পর্কিত।
তিনি আরো বলেন, লকডাউন শুরু হলে আদিবাসীরা নিজস্ব স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলেও নতুন প্রজন্মের মাঝে এর প্রচলন কম। স্বীকৃতি ও চর্চা বা রাষ্ট্রীয় সংযোগের অভাব এ অবস্থার জন্য দায়ী বলেও মত দেন তিনি।
এছাড়া উক্ত অনলাইন আলোচনায় যুক্ত থেকে গান শোনান এফ মাইনরের ভোকাল নাদিয়া রিছিল। তাঁর গাওয়া বিখ্যাত গান – ‘আমরা করবো জয়, আমরা করবো জয় একদিন’ এই গানের মধ্য দিয়ে উক্ত ওয়েবিনারটি সমাপ্ত হয়।