খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় ১ নং গোলাবাড়ি ইউনিয়ন সংলগ্ন বলপেয়্যে আদাম নামক গ্রামে নিজ বাড়িতে ৯ জন বাঙালি কর্তৃক এক মানসিক প্রতিবন্ধী জুম্ম নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং গ্রেফতারকৃত ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে আজ বিকাল তিনটায় চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ । পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মিছিল ও সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেন চাকমার সভাপতিত্বে ও পিসিপি চবি শাখার সদস্য হ্লামিউ মারমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সুখী কুমার তংচংগ্যা।
এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেং ইয়ং ম্রো, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মংছেনু মারমা প্রমূখ। এছাড়াও উক্ত সমাবেশে উপস্থিত থেকে সংহতি জানান চাকমা সার্কেল চীফের উপদেষ্টা রাণী য়েন য়েন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ষণের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসী নারী এবং সমতলের নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে বসবাস করছে। এসব থেকে উত্তরণের জন্য ধর্ষক এবং নিপীড়নকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য জোর দাবী জানান বক্তারা।
উক্ত সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন এবং শাসকগোষ্ঠীর নিরবতায় সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না এবং অপরাধীরা বার বার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের উপর ধর্ষণ ও সহিংসতার হার বেড়েই চলেছে। সহিংসতা, ভূমিদখল থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা জরুরি বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠী কিংবা প্রশাসন প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংঘন করেই চলেছে। শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ জনগণের উপর অব্যাহত দমন পীড়নের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। যার ফলে নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম প্রতিদিন বাড়ছে। এর একটিরও সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না। এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জোর দাবী জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহষ্পতিবার আনুমানিক ভোর আড়াইটার দিকে খাগড়াছড়ি সদরে ১ নং গোলাবাড়ি ইউনিয়ন সংলগ্ন বলপিয়ে আদাম নামক গ্রামে নিজ বাড়িতে ৯ জন বাঙালী কর্তৃক মানসিক প্রতিবন্ধী এক জুম্ম নারীকে গণধর্ষণ এবং বাড়ী লুটপাটের জঘন্য ঘটনা ঘটায়।গত বৃহষ্পতিবার আনুমানিক আড়াইটার সময় ৯ জনের একদল সেটেলার দা-ছুরি সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের বাড়ির দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। বাড়িতে ঢুকতে প্রথমে মা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ভুক্তিভোগী জুম্ম নারী, মাকে সহ বুড়ো বাবাকে দড়ি দিয়ে বাধে। এরপর মা-বাবাকে আলাদা একটি রুমে দরজা বন্ধ করে রাখে। পরে ওই জুম্ম নারীটিকে আরেকটি রুমে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে।দুর্বত্তরা যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে নগদ ৮,০০০/- ( আট হাজার) টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। যা প্রায় দেড় লক্ষ টাকার সমান। এ ঘটনায় জড়িত ৭ জন সেটলার বাঙালিকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।