করোনা মহামারীর মধ্যে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল এবং ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের উপর সংঘবদ্ধ হামলা অব্যাহতভাবে চলছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন। পাহাড় এবং সমতলে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল ও এ সংশ্লিষ্ট সহিংসতার কথাও জানিয়েছে আদিবাসীদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনটি। আগষ্ট-২০২০ এ আদিবাসীদের মানবাধিকার অনলাইন প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে কাপেং ফাউন্ডেশন। আজ ১ সেপ্টেম্বর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি।
উক্ত প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনলাইন ভিত্তিক নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ বছর বাংলাদেশের আদিবাসী সংগঠন ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃক আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হয়। তবে এ বছর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস তথা আদিবাসী ধারনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে এবং অনলাইন নিউজপোর্টালে অনেক প্রবন্ধ ও ফিচার প্রকাশিত হওয়ারও উদ্বেগ জানিয়েছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনে আরো জানানো হয় যে, সে তুলনায় (আদিবাসী অধিকার বিরুদ্ধ প্রচার) আদিবাসী অধিকারের পক্ষে মুষ্ঠিমেয় ২/১টি প্রবন্ধ ও ফিচার প্রকাশিত হয়েছে মাত্র। তাও আবার বেশির ভাগ প্রবন্ধ/ফিচার প্রকাশিত হয়েছে আদিবাসী সুরক্ষা কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত অনলাইন নিউজপোর্টালে বলে জানানো হয়।
এছাড়া আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বাধা দেয়া হয়েছে বলেও উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভূমি দখল প্রসঙ্গে উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, আগস্ট মাসে ভূমিদস্যুরা মৌলভীবাজার ও সিলেটে দু’টি পান জুমে পান গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির কমপক্ষে ১০০০টি গাছ কেটে দিয়েছে। রাজশাহীর জেলার ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মপল্লিতে আবাসন প্রকল্পের ফলে ১৩০টি আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদের মুখে পড়েছে। কক্সাবাজারে আদালতের আদেশ অমান্য করে আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে এবং সুনামগঞ্জের সীমান্তে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কবলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আদিবাসীদের কৃষিজমি।
এছাড়া উক্ত মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার কর্তৃক বাড়ি নির্মাণ, লংগদুতে প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে সেটেলার কর্তৃক জুম্ম ভূমি মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩টি ম্রো গ্রামবাসীকে রাবার কোম্পানি কর্তৃক গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকির তথ্য উঠে এসেছে উক্ত প্রতিবেদনে।
আদিবাসী হত্যার শিকার প্রসঙ্গে উক্ত প্রতিবদনে বলা হয়েছে যে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও দিনাজপুরের হাকিমপুরে ২ জন আদিবাসী হত্যার শিকার হয়েছে এবং টাঙ্গাইলের মধু্পুর ও শেরপুরের ঝিনাইগাজীতে একজন নারীসহ ৩ জন হামলার শিকার হয়েছে।
নারী সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগষ্ট মাসে করোনার সময়ে আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আদিবাসী নারীর উপর যৌন সহিংসতায় ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, মারধর ও হামলার শিকার হয়েছেন ২ জন পুরুষসহ ১৪ জন আদিবাসী নারী। তার মধ্যে ২ জন নারীকে ধর্ষণ, ২ জনকে ধর্ষনের চেষ্টা ও ইভটিজিংয়ের শিকার, ১ জনকে বিয়ের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা ও ১ জন নিখোঁজ এবং ২ জন পুরুষসহ ৮ জন নারী মারধরের শিকার হন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার একজন আদিবাসী কলেজ ছাত্রীর ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও ২১ জনকে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আটকে রেখে নির্যাতন, ৯ জন ব্যক্তিকে মারধর, হয়রানি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ২টি দোকানসহ ১৭টি বাড়ি তল্লাসী ও তছতছ করা এবং ক্ষমতাসীন দল ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ইউএনডিপি’র করোনাকালে সহায়তা হিসেবে প্রদেয় চাল বিতরণে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় কাপেং ফাউন্ডেশনের উক্ত প্রতিবেদনে।
এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে পানছড়ির চেঙ্গী ইউনিয়নে ও লোগাং ইউনিয়নে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত দু’টি বাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভাঙচুর ও উচ্ছেদ করেছে বলে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।