বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে আগুনে স্থানীয় কয়েটি পাড়ার ম্রো আদিবাসীদের জুম ও ফলজ বাগান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এর ফলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এই আগুন গতকাল (২৩ মার্চ) সারাদিন ও রাত ১২ টা পর্যন্ত নেভাতে গ্রামবাসীদের বেগ পেতে হয়েছে বলে আইপিনিউজকে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রামরী পাড়ার অধিবাসী ও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী চ্যংঙি ম্রো। গত ২২ মার্চ রাতের বেলায় তাঁদের পাড়া থেকে দূরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। রামরী পাড়া ছাড়াও এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাত্যেপাড়া, রাংলাই পাড়া ও সিংচ্যং পাড়া ।
চ্যংঙি আইপিনিউজকে জানান, আমাদের উত্তর হাঙ্গর মৌজা খাল থেকে অনেক বছর ধরে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এখন এই খালের সমস্ত পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। এই পাথর শেষ করে এখন পাহাড়ের বিভিন্ন খাদে পড়ে থাকা পাথর উত্তোলনের জন্য হন্যে হয়ে নেমেছে স্থানীয় বাঙালি পাথর ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই পাথরগুলো জঙ্গলাবৃত থাকায় এগুলো খুঁজে বের করাটা কষ্ট সাধ্য। তাই বিভিন্ন সময় পাথর ব্যবসায়ীরা এই পাথর খুঁজতেই জঙ্গলে বেপরোয়াভাবে আগুন দেয় আর পাথর খুঁজে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ধারণা এই পাথর ব্যবসায়ীরাই গত ২২ মার্চ আগুন দিয়েছে। আর এই আগুন আমাদের পাড়া থেকে আনুমানিক ৫-৭ কি.মি দূরত্বে পৌঁছে যায় ২৩ মার্চ সকাল ১১ টার দিকে। তারপর থেকে আমরা পাড়াবাসীরা মিলে আগুন নিভিয়েছি রাত ১২ টা অবধি। আর একটু হলেই পুরো পাড়া পুড়ে যেত বলে আশংকা করেন চ্যংঙি।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে রামরী পাড়ার কার্বারী মেনরুম ম্রো আইপিনিউজকে বলেন, আমার নিজের বরই বাগান পুড়ে গেছে। ৪০০ বরই চারা গত ৩ বছর ধরে ফল দিচ্ছে তার পুরোটাই ছাই হয়ে গেছে। তাছাড়া ২৫০ টির মত চারা গতবছর নতুন লাগিয়েছি। সেগুলোও ছাই হয়ে গেছে। তাছাড়া পাড়ার অনেকের আম বাগান, লিচু বাগান, ড্রাগন ফলের বাগান, পেঁপের বাগান পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই পরিবারগুলো এখন নি:স হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চ্যংঙি ম্রো আইপিনিউজকে আরো জানান, পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করা হলেও কোনো ধরণের প্রতিকার পাওয়া যায়নি। প্রশাসন কোনো ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। যার ফলে এখনো পাথর ব্যবসায়ীদের লোভাতুর হিংস্রতার বলি হতে হচ্ছে আমাদের। একদিকে প্রকৃতির উপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে অন্যদিকে খাল ও ঝিরির পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। গতকালকের আগুনে পানি সরবরাহের পাইপও পুড়ে গেছে যার জন্য এখন পানি সংগ্রহ করতে পাড়াবাসীর খুব কষ্ট করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।