রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর নব কমিটি গঠন: দায়িত্বে বর্ষা চাকমা ও সজীব তঞ্চঙ্গ্যা
আগামী এক বছরের জন্য এই কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পাহাড়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বর্ষা চাকমা এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সজীব তঞ্চঙ্গ্যা ও পহেলা চাকমাকে করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক।
আজ ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ইং রোজ সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত “বার্ষিক মিলনমেলা ২০২২ ও ৫ম কাউন্সিল” অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ মেয়াদের নতুন এই কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। বর্ষা চাকমাকে ও সজীব তঞ্চঙ্গ্যা ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটির নেতৃত্ব দিবেন।
রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর সদ্য বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি রুমেন চাকমা’র সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের বিদায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব তঞ্চঙ্গ্যা ও সদস্য মাছেন হ্লা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বসুমিত্র চাকমা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জেসী ডেইজী মারাক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক শাং থুই প্রু।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চবি শাখার সভাপতি নবোদয় চাকমা, সাধারণ সম্পাদক নরেশ চাকমা, বিএমএসসি,চবি শাখার সাংস্কৃতিক কমিটির সভাপতি চিংমং মারমা, টিএসএফ, সিএমবির সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক পাভেল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টুম্পাও ম্রো, বিটিএসডব্লিউএফ, চবি অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক সুখীজয় তঞ্চঙ্গ্যা, বিআরএসএ’র কেন্দ্রীয় সদস্য মাছেন হ্লা রাখাইন প্রমুখ। আলোচনা সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ভুবন চাকমা।

আলোচনা সভার শুরুতে চবি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে নবনিযুক্ত প্রভাষক ও অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শাং থুই প্রু’কে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বসুমিত্র চাকমা বলেন, ‘এদেশে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিচয় সংকটে ভুগতে হচ্ছে। দেশের বৃহত্তর জাতিগোষ্ঠীদের মাঝে টিকে থাকতে হলে আমাদের মনের মধ্যে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে হবে। একইসাথে আমাদের নিজস্ব কালচারকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে নিজের জাতিসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে।
তিনি আরো বলেন, ম্রো’রা তাদের নিজ ভাষায় কথা বলবে, মারমা-গারো সাঁওতালরা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা বলবে। এভাবেই আমাদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তরে আমাদের জন্য সুযোগ খোলা আছে। এজন্য আমাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে বিলীন হয়ে না যায় মতো আমাদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে বিশ্বকে জয় করতে হবে।
‘
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেসী ডেইজী মারাক বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অনেক অধ্যায় চলে আসে। শত বাধাকে পেরিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ধৈর্যশক্তিটা মনে গেঁথে রাখতে হবে এবং সবকিছুর মধ্যে আনন্দকে খুঁজতে হবে।’
বিশেষ অতিথি শাং থুই প্রু বলেন, ‘শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে আমাদের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের নানা বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবধি আসতে হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে ভালোমতো কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে জাতি বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যেমন সময়ের স্রোতে মূলধারার সাথে তালমিলিয়ে চলতে হবে তেমনিভাবে শিকড়কেও ধরে রাখতে হবে। এই বিশ্বায়নের যুগে আমরা সহজেই নিজের শিকড় ও জাতিসত্তাকে ভুলে যায় সেটা কাম্য নয়।
‘
পিসিপি,চবি শাখার সভাপতি নবোদয় চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, ‘রঁদেভূ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলছে। এটা এক প্রকার সংগ্রাম। রঁদেভূ তার জন্মলগ্ন থেকে তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে বৃহত্তর জনসমাজে প্রচার করে যাচ্ছে।’
নরেশ চাকমা বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলন যখন থেমে যায়, কথা বলার পথ যখন রুদ্ধ হয়ে যায় তখন অত্যাচার-নিপীড়নের কথা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে তুলে ধরতে হয়। বিশ্বায়নের যুগে সংস্কৃতি চর্চা, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের অস্তিত্বের কথা জানান দিতে হবে।’
বিএমএসসির সাংস্কৃতিক কমিটির সভাপতি চিংমং মারমা বলেন, ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এক একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সকলের উচিত নিজের সংস্কৃতিকে চর্চা করা। সারাদেশে নিজস্ব সংস্কৃতিকে পরিচয় করাতে হবে আমাদের। এই জায়গা থেকে রঁদেভূ’র কার্যক্রম খুবই প্রশংসনীয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে এই চেতনা জাগিয়ে দিচ্ছে।’
আলোচনা সভার পরবর্তীতে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩ সদস্য বিশিষ্ট ২০২২-২৩ মেয়াদের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন সংগঠনের বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি রুমেন চাকমা এবং নবগঠিত কমিটিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
দিনব্যাপী আয়োজনের সকালে বিভিন্ন খেলাধুলাসহ উপস্থিত সকলের মধ্যে পরিচয়পর্ব সম্পন্ন হয় এবং বিকালের পর্বে মূল আলোচনা সভার পরবর্তীতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, লটারি ড্র ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বার্ষিক মিলনমেলা ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।